স্বপ্না বন্দ্যোপাধ্যায়


বাক্‌ ১৪১ ।। 




গীতগোবিন্দম

কদম্বের গাছে কাচচুড়ি ঝোলানো আছে
আরও আছে শিখি ও ঝুমর
কোমর অবধি ডুব যমুনার তলে
অস্থি কিছু ফুটিয়া থাকে পদ্মের নাভিতে

রাঙা পা নামিয়াছে পঙ্কে-কাদায়
ঘোর অমানিশা যেন দুরন্ত বেগ
তার মাঝে ভেলভেটি গাঢ় শালুকের পাতা
ঝগড়া করিতেছে দু’মুখি শালিক

চোকজ তোলো নিতম্বের প্রবল ধরণে
চোখ তোলো হরিদ্রায় পীত বয়সে
নাকখানি বাঁশি আর বাঁশির নিকটে
টলমলে ফলিয়া আছে নোলকের ধার

গোবিন্দপ্রেমিক হাটে গেছে বেসাতি বেসর
গ্রাম পেরোনোর আগে রাখিয়া গেছে রং
ফেরবার বেলা সাইকেল কাঁচাপথ ধরিবে
তারাখেলা চোখ সহিয়া গেলে তারপর পাটি পেতো
চাঁদের ধানমুখি আলো রবাহূত ছায়া ছেড়ে যাবে


ঈশ্বর

১.
কথা হয় চোখের ডুবে
দেখা হলে ঠোঁট সরে যায় আর
মন্ত্রের সঠিক উচ্চারণ সুর করে পাঠ বলে যায়
গিনির মতো সময় নিক্তি করি
দু’ঘণ্টা-তিনঘণ্টা বেহুঁশ আদাহ
হ্যাঁচকা টানি উঠে বসাই তারপর
তরতর করে সিঁড়ির নিচে নিয়ে আসি
সামনে রাস্তা অনেক বুড়ো বাচ্চা যুবক
মেয়েরা বাজার সেরে ফিরছে স্কুটিতে
সময়ের হুঁশ ফেরে হাঁসফাঁস করে অটো ধরে সে
কথাদের কুড়োতে কুড়োতে বাড়ি ফিরি
মণির খুব ভেতরে থাকা কথার ছবিকে
নিজের ভেতরে ফিরি করে বাড়ি বেয়ে উঠি

সময় সে সময় ফোন করে উত্তেজনায়
কথার লেজটিকে আমার ঘরে ভুলে ফেলে রেখে গেছে

২.
ঘেমে যাচ্ছো খুব কপাল চুইয়ে চন্দন
ফোঁটা ফোঁটা ঘষে যাচ্ছে আমার কপালে
অন্ধকার গড়তে থাকা ঘর জানলার শিক
থেকে আলো খেয়ে নিজেকে উজ্জ্বল করছে
সেই মাছ যা শরীরের মধ্যজলের হিমে
ঘুমিয়ে ছিল নিস্ক্রিয় ধাতুর মতো
সেও ফলা হয়ে আগুন জ্বেলেছে
মাছ পুড়ে যাচ্ছে পুড়ে ঝলসে যাচ্ছে
হাত-পা ছোঁড়ার আগেই অবশ হচ্ছে স্নায়ু

ওই দরজা বন্ধের গল্প শোনালো
এই টুকরো অন্ধকারের পাপড়ি
ওই কাচের বোতলে রাখা প্রজাপতিগাছ
এই ছায়ার ওঠানামা ঢেউ শূন্যে ছোঁড়া চুমু
ওই ঝড়ের ঘূর্ণি এই পাঁশুটে চাদরের এলোমেলো

চায়ের আদাগন্ধের থেকে দামি আরও কিছু
তরুণ পারফিউম উড়ে উড়ে বিষণ্নতা আনছে

৩.
ঈশ্বরের শিং জলপ্রপাত
ঈশ্বর বৃষ্টিহরিণ
ঈশ্বরের জিভ মাল্টিকালার
ঈশ্বর বিচিত্র গিরগিটি
ঈশ্বরের ভুরুর তিরে
বেঁধা আছে আননোন ক্রিয়েচার

শুধু মনের আকাশ ভারী হয়ে এলে ডোঙা বাঁধি
ঈশ্বর নদীমাঝি ভারচুয়াল ভাটিয়ালি গায়


নির্বাসন

তোমার দূরত্ব থেকে খুলে যেতে যেতে
নিজেকে মান্দাস ভাবছি
ঢেউ সরছে তল নামছে অহরহ
তোমার নৈকট্য থেকে বাঁক ফেরাচ্ছে
সমস্ত অববাহিকার দুরন্ত

হাত ফেলছি সহজ হতে
গাঁট কেটে গুমর গড়াচ্ছে
এত অহং আমার!
এতটাই রক্ত কিলবিল!

এ নির্বাসন সবক শেখাচ্ছে
নিজেকে শব ভেবে চেপে বসছি তার ওপর
নাকের মাছিটি সরিয়ে শ্বাস টানছি সজোরে
ওই ওই খুলে যাচ্ছে মোহের দরজা
সেসব ডিঙিয়ে চার ও চতুর্দশী মান ভাঙছি
মান্দাস খোলস হচ্ছে পরতে পরতে
পা চলছে চলেই যাচ্ছে আমার ভ্রমণ থেকে খসে

1 comment:

  1. ঈশ্বর সিরিজ আর নির্বাসন বেশি বেশি ভালো লাগলো।
    ঈশ্বর টা সত‍্যিই দারুন

    ReplyDelete