দূর্বাদল মজুমদার


বাক্‌ ১৪১ ।। আমার সফর— ৭ম পর্ব



না। আমাদের অন্ধ্র বা দণ্ডকারণ্যে যেতে হয়নি। তার আগেই কলকাতার কমরেডরা যোগাযোগ করে ফ্যালে পিপলস ওয়ার গ্রুপের সঙ্গে। বেশ কিছু দলিলপত্র জোগাড় করে ওরা পাঠায়। সেগুলো নিয়ে বিভিন্ন বৈঠকে আমাদের আলোচনা চলতে থাকে।
এদিকে এমসিসির কাজকারবার ছিল বাঁশপাহাড়ি ভুলাবেদা লালজল বারিকুল এলাকায়। এদের তাত্ত্বিক বিষয় তো বই-ম্যাগাজিন পড়ে জানা গেছে, কিন্তু ব্যবহারিক কাজ কী রকম সেটা জানার জন্য আমি আর সুদীপদা একদিন ওর নতুন কেনা সুজুকি বাইকে চেপে বেরিয়ে পড়লাম। ও আমার মাকে বলে গেল, মা গো তোমার ছেলে দিনকয়েক আমার কাছে থাকবে, চিন্তা কোরো না মোটেই। সুদীপদার এরকমই অবাক করা ক্ষমতা ছিল, দেহাতি ভাষায় কথা বলত, আর আন্তরিকভাবে মা-ভাই-বোন বানিয়ে ফেলত। কেউ কেউ জন্ম থেকেই বোধহয় এই ক্ষমতার অধিকারী হয়, ভালো সংগঠকের এই গুণ থাকতেই হয়। সুদীপদার  চরিত্রে কোথাও কোনও ভান ছিল না।
আমাদের গন্তব্য প্রায় গোটা জঙ্গলমহল, এটুকুই আমাকে বলেছিল। এমসিসি-র (মাওয়িস্ট কমিউনিস্ট সেন্টার) কোন একজনের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল সে নাকি  লালজলে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায়। মূলত এমসিসি-র সংগঠন শক্তিশালী ছিল বিহার আর অধুনাতন ঝাড়খণ্ডে। তখনও বিহার ভেঙে ঝাড়খণ্ড গঠিত হয়নি। সিপিআইএমএল (পিইউ), সিপিআইএমএল (লিবারেশন), সিপিআইএমএল (রেডস্টার) ইত্যাদি নানা সংগঠন ছিল বিহার কেন্দ্রিক! তা হলেও এমসিসি ছিল এদের সবার চেয়ে বড় সংগঠন। গোটা নয়ের দশক জুড়ে জনতা দল আর বিহারের জমিদারদের নানারকম প্রাইভেট আর্মির সঙ্গে ছিল এদের সরাসরি লড়াই। রণবীর সেনা, নারায়ণী সেনা, ভূমিহার সেনা, অ্যান্টি নকশাল আর্মি ইত্যাদি। প্রচুর গণহত্যা ঘটেছিল এই সময়।
আমরা তখন চন্দ্রকোণা রোডকে কেন্দ্র করে পত্র-পত্রিকা বের করে লেখালেখি করি। সেই সময় চন্দ্রকোণা রোডে সাহিত্যচর্চার জোয়ার চলছিল। বেশ একটা বড় সাহিত্যগ্রুপ তৈরি হয়। সে বড় হুল্লোড়ের দিন ছিল। আমার বাড়িতে তখন নানারকম কমরেডদের আনাগোনা।
এমনি একটা সময়ে কিছুদিন বাড়িতে বসে আছি, সুদীপদা এসে বলল, চ, পশ্চিমদিকে যাব। আমি তো ঘর থেকে বেরিয়ে পড়তে পারলে বেঁচে যাই। ঘর তখন আমার কাছে দুঃস্বপ্ন।
আমরা প্রথমে যাই রামগড়, আলমডাঙা। গভীর জঙ্গলের ভেতরে গ্রামের নাম, বুড়িশোল, আমশোল, চামটুবাদ, শালডুঙরি। মাহাতো, ভুমিজ্, সাঁওতাল, বাগাল, আহিরদের গ্রাম। সদগোপ, ব্রাহ্মণদের গ্রামও ছিল। জঙ্গলের ভেতরে যে কংসাবতীর ক্যানেল গেছে তার পাড় ধরেই রাস্তা। এছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই গ্রামে ঢোকার। তুলনামূলক ব্রাহ্মণদের গ্রামগুলোর রাস্তা ভালো। 
সাঁওতালদের গ্রাম আমার অচেনা নয়। বংশী মুর্মু তখন আমার জিগরি দোস্ত। ওর ঘরেই মাঝেমধ্যে থাকি, খাইদাই, আর হাঁড়িয়ার ব্যবসা করি। সাঁওতাল ছেলেমেয়েদের জড়ো করে পড়াই। ওরা আমাকে বামড়ে (বামুন) বলে ডাকলেও কোনওদিন দিকু বলে মানেই নি, বরং হড়-বামড়ে (আদিবাসী-বামুন) বলেই পেড়া-কুটুমদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিত। ওরা যা যা খেত, ইঁদুর-বাঁদর-গোসাপ-ভাম সবই খেতাম। আমার টিউশানের বেতন পেলে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম দূর পশ্চিমের ঘোড়াধরা গরুর হাটের দিকে। পিওর মহুয়া আর বিৎকিল (মোষ) মাংস আনতে। বিৎকিল মাংসের দাম ছিল ২০ টাকা কেজি আর মহুয়া দশটাকা বোতল। বংশীদা মানুষটা শিক্ষিত ছিল, কবি ছিল। আমার মতোই অ্যাডভেঞ্চারার, অবিমৃষ্যকারী। সংসার বুঝতো না। বউদি আর ওর মা (আমিও মা বলতাম), ওর জমিজমা চাষ করত, ছাগল-গরু পালন করত। মোটামুটিভাবে সংসারের সব দায়দায়িত্ব ছিল ঘরের মেয়েদের ঘাড়ে আর বংশীদা বাউন্ডুলে। সেই বংশী আমাকে জীবনের রূঢ় বাস্তবতার প্রথম পাঠ দেয়। বংশীর কথায় পরে আসব। আপাতত এখানের সাঁওতাল গ্রামগুলো দেখে ওর কথা মনে পড়ে গেছিল। 
রামগড়ে একটা দিন কাটিয়েছিলাম। সেই আমার প্রথম জঙ্গলে রাত কাটানো। এখানকার গ্রামের মানুষের অবস্থা ছিল আরও দুর্বিষহ। কারও কোনও কাজ নেই, সারাদিন একটা গাছ কেটে, তাকে সমান মাপে টুকরো করে, বেঁধে, বোঝার মতো করে মাথায় নিয়ে  ভোর-ভোর বেরিয়ে পড়ে পশ্চিমে  লালগড় বা পূর্বে গোয়ালতোড়ের দিকে। সেখানে চা ও মিষ্টির দোকানে সেগুলো বেচে সেই পয়সায় চাল ও নুন কিনে বাড়ি ফেরা। এরা তখনও ডাল খায়নি, রান্নায় তেল ব্যবহার করেনি। সাবান কী জিনিস জানত না। জানলেও কাঠবিক্রির পয়সায় কুলোত না। ক্বচিৎ-কদাচিৎ কারও জমিতে মজুরের কাজ মিললেও মজুরি ছিল দশ টাকা আর একপাই মুড়ি। ভাবুন কমরেডগণ, আপনাদের রাজত্বে নয়ের দশকের মাঝামাঝি এই ছিল খেতমজুরদের অবস্থা। সেদিন রাতে খাওয়াদাওয়ার পর  সুদীপদা বলল, চল আমরা আজ জঙ্গলেই ঘুমোব। আমার তো দারুণ মজা লাগল! নিবিড় শালজঙ্গলের ভেতর অন্ধকারে একা-দোকা ঘুমানো, দারুণ অ্যাডভেঞ্চারাস ব্যাপার। জঙ্গলে হাতির রাজত্ব, তার ওপর আরও দু’-একটা জন্তুজানোয়ার কি আর বেরোবে না? ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। আমি রোমাঞ্চিত! প্রথম প্রেমের মতো সে-ও এক অবাক করা অভিজ্ঞতা।
কিন্তু তখন বুঝিনি এই অভিজ্ঞতা কী মারাত্মক হতে পারে। একটা তালপাতার তৈরি চাটাই হাতে নিয়ে আমরা তো বনের দিকে গেলাম। একটা পত্রহীন মহুলগাছের নীচে কিছুটা পরিষ্কার জায়গায় আমাদের সেই চাটাই-বিছানা পেতে শুয়ে পড়লাম। সুদীপ একটা বিড়ি শেষ করার পরই মুখে রুমাল চাপা দিয়ে নাক ডাকতে লাগল। আর আমি বাক্যহীন হয়ে মহুল ডালের ফাঁকে লটকে থাকা বাঁকা চাঁদের দিকে তাকিয়ে, কানে সেই রাতঝিম জঙ্গলের শব্দ, আর নাকে তার কুমারী শরীরের গন্ধ নিতে নিতে মোহাবিষ্ট হয়ে আছি। সময়টা বোধহয় চৈত্র মাসের কাছাকাছি। এসময় মহুয়ার পাতা ঝরে গিয়ে মুকুলিত হয়ে ওঠে তারা। তারই এক ঝিমধরা গন্ধ ছড়িয়ে আছে গাছতল জুড়ে। ক্যাঁ-ক্যাঁ খ্যাঁ-খ্যাঁ করে বড় ডানার কোন রাতচরা পাখি রাতের স্তব্ধতা ভেঙে ডেকে ডেকে উড়ে গেল বনগহনের দিকে। কোথাও সরসর খরখর শব্দে আঁতকে উঠছি আমি, এই বুঝি কোন সরীসৃপ চলে গেল পাশ ঘেঁষে! বুকের মধ্যে ঢিবঢিব হৃৎপিণ্ডের  শব্দ পরিষ্কার কানে লাগছে। মনটাকে শেষমেশ টেনে সরিয়ে রাখছে প্রকৃতি। সুদীপদার বোধহয় এসব জায়গায় ঘুমোনো অভ্যাস আছে। কিন্তু আমি সাঁওতাল পাড়ায় রাত কাটালেও অচেনা বনের গহনে এই ‘আচানক হুয়া’ পরিস্থিতিতে রাত কাটাইনি কখনও। এ আমার সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা। একটার পর একটা বিড়ি খাচ্ছি আর মৃদু উত্তেজনায় কত আনাড়ি কথাই ভেবে যাচ্ছি যে!
রাত বাড়লে বনের কোরক থেকে ভেসে আসা অজানা ফুলের গন্ধভরা মিষ্টি হাওয়া আর দূর গ্রামের থেকে ভেসে আসা মাতাল মাদলের শব্দকখন যে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল বুঝতে পারিনি।
একসময় ঘুমের মধ্যে মনে হল হাতপায়ে প্রচণ্ড জ্বালা করছে আর মাথার উপর বোয়িং বিমানের শব্দ। ধড়মড়িয়ে উঠে পড়তেই হল। আহ, কী মশা। শয়ে শয়ে মশা আমাদের ছেঁকে ধরেছে। সুদীপ গায়ে-হাতে-পায়ে চুলকাচ্ছে আর বলছে, শুয়ে পড়, ও কিছু হবে না, একটু পরেই অভ্যাস হয়ে যাবে!
‘হায়, কী দার্শনিক কথা মাইরি! আমার পা-হাত ফুলে ডুমো ডুমো হয়ে গেছে! প্রচণ্ড জ্বালা! হাত মুঠো করতে পারছি না, আর বলে কিনা অভ্যাস হয়ে যাবে! শালা তুমি মানুষ না জানোয়ার!
‘ঠিক বলেছু! আর কিছুদিন পর তুইও জানোয়ার হয়ে যাবি। এখন থেকে চেষ্টা কর, আমাদের জানোয়ার হতেই হবে ভাই। বনে কি আর মানুষ থাকে রে!
সুদীপের এই কথা ক’টি আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল। যে ক’দিন বনপার্টি (স্থানীয় লোকজন তাই বলত) করেছি বেদবাক্য হয়ে থেকে গিয়েছিল কথাগুলি।
যাইহোক প্রচণ্ড তেষ্টা পেয়েছিল কিন্তু হাতের কাছে খাবার জল নেই। কেমন একটা ঠান্ডা আবহাওয়া। মনে হল ভোর হয়ে আসছে, তখন আমি একটা ডিজিটাল কম পয়সার ঘড়ি পরতাম, সেটার দিকে তাকিয়ে দেখি চারটে বেজে গেছে। তার মানে যে ক’ ঘণ্টা ঘুমিয়েছি মশারা আমার শীর্ণ শরীর থেকে কত বোতল রক্ত যে খেয়েছে, ভাবতেই সাদা হয়ে যাচ্ছি!
যাইহোক এখন খাবার জল পাব কোথায়! সুদীপকে সে কথা বলতেই ও উঠে বসল। বলল, চল পায়খানা মুখধোয়া সেরে ফেলি। না হলে এবার পাড়ার লোকজন চলে আসবে। মেয়েরাও বাহ্যে বসতে এদিকে আসে ভোর ভোর। 
এই গ্রামে পুকুর নেই। কংসাবতীর ক্যানেলই ভরসা সবার। তালাই গুটিয়ে আমরা ক্যানেলপাড়ের দিকে চললাম। স্বচ্ছ নীলাভ জল বয়ে যাচ্ছে। তেষ্টায় বুকটা শুকিয়ে উঠছিল, আমি আর থাকতে না পেরে সেই জলই আঁজলা করে তুলে ঘটঘট গিলে ফেললাম। সুদীপ শালদাঁতনে দাঁত ঘষতে ঘষতে বলল, ‘এই জলই ওরা খায়।’
আমি আর কিছু ভাবলাম না। এদের না আছে পুকুর, না কুয়া। এই জলেই কাপড় কাচা, রান্না করা, স্নান করা, খাওয়া। ওর কথাগুলো মনের মধ্যে বাজছিল, আমাদের জানোয়ার হতেই হবে ভাই!
সকালে প্রত্যেক ঘরে একহাঁড়ি ভাত ফুটত। উনুনশাল ঘিরে গোল হয়ে বসে বাচ্চারা জামবাটি বাজাতে লাগত। পরের দিন যখন আমাদের খেতে ডাকল ওরা, দেখলাম এক জামবাটি ভাত আমাদেরও বরাদ্দ হয়েছে। আমি একজনের ঘরে আর সুদীপ আর-একজনের ঘরে। দু’জনকে এক ঘরে খাওয়ানোর সামর্থ নেই ওদের। ভাত বলতে, জামবাটি ভরতি ফ্যান আর তলায় কিছু ভাত। ওরা বলে দাঃমাড়ি। এবেলা একবাটি আবার সন্ধ্যাবেলায় একবাটি। এই হল খাদ্য।
ভাতের সঙ্গে শালপাতায় করে এনে দিল বুলুং আর মরিচ্‌ (নুন-লংকা), আর-একটা পাতায় বুনো কুঁদরির ভাজা। খিদের জ্বালায় তাই গোগ্রাসে খেয়ে নিচ্ছে বাচ্চারা। এই পাশের গ্রামের মানুষদের থেকে আমাদের গড়বেতার মানুষদের কিছুটা ফারাক আছে। গড়বেতা তবু একটু কৃষির দিক দিয়ে উন্নত, মানুষজন কাজ-টাজ পায়। সাধারণভাবে অসুস্থ না হলে খাবার অভাব হয় না। কিন্তু এরা একেবারে নিঃস্ব, সর্বহারা। জঙ্গলের উপরই ভরসা, জঙ্গলই মা-বাপ। যখন পেল খেল, না পেলে গুড়-মহুল ফুটিয়ে সোমরস তৈরি করে গিলে নিয়ে নাগাড়ে লাগড়া-মাদল পেঁদিয়ে গেল। ভাবটা হল, ‘তমরা খাবার কাঁড়্যে নিয়েছ ত কী-ই বালটা হইছেক ব, হামদের লগড় (আনন্দ) কাড়্যে লিবেক এমন সাধ্যি কার হে বাছা!
আমাদের নেতৃত্বের বিহার মডেল পছন্দ ছিল না। কেননা বিহারে ভূমিসংস্কার না হওয়ার ফলে সামন্তবাদের চেহারা ছিল মারাত্মক। সর্বব্যাপি শোষণ, নিপীড়ন, সামন্তবাদী খুন, ধর্ষণ ছিল নিত্যকার ঘটনা। নেতারা নির্বাচনী প্রচারে বেরোলে তার সঙ্গে থাকত ষাট-সত্তর জনের বন্দুকধারী নিজস্ব বাহিনী। প্রায় সারা বিহার জুড়েই রাষ্ট্রের আইন চলত না। এদের মৌখিক আইনই আইন। এমসিসি, পার্টি ইউনিটি, লিবারেশন ইত্যাদি গ্রুপগুলো এদের মোকাবিলা করেই তাদের অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছিল। অন্যদিকে অন্ধ্র দণ্ডকারণ্যে সামন্তবাদের এই ভয়াল রূপের সঙ্গে লড়াইটা তারা পেরিয়ে এসে, দণ্ডকারণ্য মডেলকে তারা তুলে আনতে পেরেছিল। গেরিলাজোন, গেরিলা ওয়ারফেয়ার জোন আর মুক্তাঞ্চল তৈরির প্রথম ধাপ তারা প্রতিষ্ঠা করছিল। এখন তাদের লড়াইটা সরাসরি রাষ্ট্রের সঙ্গেই শুরু হয়ে গিয়েছিল।
আমাদের এখানের পরিস্থিতি বা আগামী আন্দোলন যেহেতু জঙ্গলমহল কেন্দ্রিক গড়ে উঠবে আশা করা যাচ্ছিল তাই পিপলস ওয়ারের মডেলই আপাতত সঠিক মনে হয়েছিল নেতৃত্বের কাছে।
দাঃমাড়ি খেয়ে আমরা রওনা দিলাম আরও পশ্চিমে সারেঙ্গা-রাইপুর ছাড়িয়ে বারিকুলের দিকে। পিচের রাস্তা নামেই। আসলে গর্তে ভরতি লাল মোরামের রাস্তা। একঘণ্টার পথ পেরোতেই সারাদিন লেগে যায়। আমি তখন বাইক চালানো শিখে গেছি, তাই দু’জনে মিলেই ড্রাইভ করি। প্রথম দীর্ঘ পথ বাইকে পাড়ি দিলে গায়ে ব্যথা হয়ে যায়। তার উপর ধুলো। ফলে কিছুক্ষণ পরপরই ক্লান্তি লাগে।
রাইপুর পেরোতেই সমতল রাস্তা পাহাড়ি রাস্তায় বদলে গেল। এরপর শুধু পাথরের টুকরো বিছানো উঁচু-নিচু রাস্তা আর হরজাই গাছের জঙ্গল। লালগড়ের জঙ্গলের থেকে এই বনের চরিত্র আলাদা। রাস্তার সামনে কী আছে তার হদিস নেই। বনের মাঝে আসুরিক পরিশ্রমে বানানো ছোট ছোট খেত। এই অঞ্চল তারাফেনি ও ভৈরববাঁকি নদীর অববাহিকা। বর্ষার জলই এখানের চাষের ভরসা।
এই অঞ্চলে এর আগে আমি কখনও আসিনি। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমে যে মালভূমি অঞ্চল আছে তা শুধু বইয়ের পাতাতেই পড়া। আজ চাক্ষুষ দেখে তার সঙ্গে মিলিয়ে নিতে লাগলাম।
                         
(ক্রমশ)

1 comment:

  1. স্বধর্মী ভেবেই পড়ছি কমরেড, তবুও রোমাঞ্চিত!যে কোন রাজনৈতিক উপন্যাসকে হার মানিয়ে দেবে এ লেখা শুধু তার সৎ এবং প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কারণেই।আর ভাষার কথা বলাই বাহুল্য--- টানটান,এবং মানুষছোঁয়া।স্থানিক হয়েও ভীষণ ভাবে স্থানোত্তীর্ণ।

    ReplyDelete