হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাক্‌ ১৪১ ।। মধ্যরাতের সংলাপ 



(এক)

তোমার সঙ্গে অনেকটা পথ একসঙ্গে, এতে কি কিছু প্রমাণিত হয়, জানি না, প্রমাণিত হলেই বা কি যায় আসে, আমার মতো করে আমি নিজেকে টেনে এনেছি, দেখেছি তোমার পাও আমার তালে তালে, বুঝেছি এটাও একটা ছন্দ, এগিয়ে চলার বৈচিত্র্যপূর্ণ সমীকরণ, সীমানাহীন কিছু অক্ষর শব্দ, কেউ আমাদের কোথাও কোনো গাছের ছায়ায় অথবা খোলা আকাশের নিচে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল, তখন থেকেই এক বিশেষ ছন্দে নিজেকে বেঁধে ফেলা, কখনও তোমাকে ছাড়িয়ে আবার কখনও আমাকে ছাড়িয়ে অনন্ত হেঁটে চলা, চোখের সামনে না থাকলেও মনে হয় পৃথিবীর যে কোনো এক প্রান্তে আজকের মতোই একইভাবে পা পড়ে চলেছে

(দুই )

আমি কি বলে দেব গলিঘুঁজির কথা, দুয়ার খুলে দিয়ে বলব যার যেমন খুশি দেখে নাও, তারপর যার যেমন ইচ্ছা সে সেরকমভাবে সংজ্ঞা তৈরি করে নেবে, আমি দেখতে চাই সংজ্ঞার মধ্যে কতখানি উঠে আসে যুদ্ধের কথা, সেই যুদ্ধ যেখানে একপক্ষের হাতে থাকবে আধুনিক সব অস্ত্রসস্ত্র আর একপক্ষ প্রাচীন সব পন্থায়, দেখব উঠে আসে কিনা সেই ছবি যেখানে এক বৃত্তের মধ্যে নিজেদের বেঁধে ফেলছে যুদ্ধবাজ আধুনিকরা, পড়ে নেওয়া যাবে কত মানুষের মধ্যে যুদ্ধ বহু শাখায় বিভক্ত হয়ে আছে

(তিন)

মুখ কোথায়, তুমি আসার অনেক আগেই মুখ চলে আসে, মুখই তো আলো, তুমি তোমার চারপাশ, এখন মুখ নেই, এখন শুধু হাওয়া ঘোরে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর হাওয়া বদলে বদলে যায়, এখন শুধু গর্ত, কোথাও কিছু নেই, হঠাৎ করেই উদয় হয়ে যায়, দাঁড়ানোর সময়টুকু পর্যন্ত নেই, অন্ধকারেই দেহ বদল, গর্তই বলে দেবে আর কতদিন বেঁচে থাকবে সূর্য 

(চার)

হাতে ধরিয়ে দিয়েছ চারদেওয়াল, আমার মতো করে আমি রঙ মাখিয়ে নিয়েছি, সংজ্ঞা উড়িয়ে দিই নি, তোমার মতো করেই চার পাঁচ পাতা লিখে ফেলেছি, তোমারই কথা আমার মতো করে আমি সাজিয়েছি, সামনে পিছনে কাছে দূরে এপাশে ওপাশে কোথাও না কোথাও তুমি রয়েই গেছো, ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কিছুই সাজাই নি, শুধু একটাই চাওয়া ছিল, একটা যেন জানলা থাকে, ঢুকতে বেরোতে যেন পারি, কিন্তু নেই, একবারও আকাশ দেখবো না, নিজেই তৈরি করে নিয়েছি জানলা, ঘরের ভেতরের ছবি জানলার আলোয় একটু তো বদলাবেই

(পাঁচ)

নিজের মতো করে যেমন খুশি বাড়িয়ে নাও, তুমি কি নিজে ভেবেছ এই অতিরিক্ত অংশের কথা, ওটা তো দেখার জন্যে নয়, কি কি বসাবে সেখানে, কোনোদিন বাইরে বেরিয়ে এসে নিজেকে দেখেছ, অতিরিক্ত অংশ— সে তো তোমার বিস্তার, নিজেকে আরও দূর প্রদেশ পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়া, অতিরিক্ত অংশের প্রাপ্তি নিজের জয় বলে ধরে নিয়েছ, এটাও তোমার একটা পরীক্ষা, অতিরিক্ত অংশের মধ্যে কোন কোন বিষয় থাকলে নিজের এই বিস্তারের যোগ্যতাকে স্পষ্ট করে মেলে ধরা যায়, তা না হলে অতিরিক্ত অংশে শ্মশান শূন্যতা

No comments:

Post a Comment